মরনোত্তর অঙ্গদানের মাধ্যমে মৃত্যুকে অতিক্রম করে বেঁচে থাকা তো একরকম পুনর্জন্মই। এই পুনর্জন্মের ভাবনাকেই পুজোর থিম এবং চক্ষুদানের অঙ্গীকারকে পূজার অন্যতম মূলমন্ত্র করে এবারের দুর্গোৎসবের আয়োজন করছে যোধপুর পার্ক শারদীয়া উৎসব কমিটি। এই পুজোর আয়োজক থেকে শুরু করে থিম শিল্পী সকলেই চক্ষুদানের অঙ্গীকার করবেন এবারের পুজো মণ্ডপে।
বাপাই সেনের ভাবনায় , সনাতন পালের প্রতিমায় সাজবে যোধপুর পার্ক পুজো মন্ডপ । তাঁদের এবারের পুজোর থিম সংগীত লিখেছেন ও সুর দিয়েছেন দেবতনু দত্ত ও শুভজিৎ সাঁতরা। গেয়েছেন মৌসুমী দাস ও শ্রেয়া ব্যানার্জী ।
পৃথিবীর আলো, রঙ, রূপ, আমাদের সামনে সুস্পষ্টরূপে দৃশ্যায়িত করার জন্য, যে অঙ্গটি সবচেয়ে জরুরী, সেটি হলো ‘চোখ’। দৃষ্টিহীনদের অন্ধকারের কথা, দৃষ্টিসম্পন্ন মানুষের অনুভবের বাইরে। আর সেটাই স্বাভাবিক। তবু আমরা তো ভেবে দেখতে পারি? অতীতে দৃষ্টিহীনরা অন্ধত্বকে, ঈশ্বরের অভিশাপ বা ভাগ্যের লিখন বলেই মেনে নিতেন। সেই ভ্রান্ত ধারণা আজ বদলেছে। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান আর প্রযুক্তির মাধ্যমে বহু ধরনের অন্ধত্ব রোধ করা আজ সম্ভব। মৃত্যুর পর নিজের চোখ অন্যকে দানের মাধ্যমে, চাইলেই বেঁচে থাকা যায়, পৃথিবীর আলো রঙের মাঝে। আমাদের দেশে ৪০ মিলিয়ন মানুষ একেবারে অন্ধ বা আংশিক অন্ধ (Blind ) এমনটাই জানাচ্ছেন সমীক্ষকদের একাংশ। ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের (WHO)-র তথ্য অনুযায়ী এই ৪০ মিলিয়ন মানুষের মধ্যে, প্রায় ১.৬ মিলিয়ন শিশুও রয়েছে। মৃত্যুর পর যাতে চোখ দুটি অন্য কোনো মানুষের কাজে লাগতে পারে, সেই ভেবেই মরণোত্তর চক্ষুদান করে যান বহু মানুষ। কর্নিয়া প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে মানুষের অন্ধত্ব মোচন অনেকটাই সম্ভব। চক্ষুদাতা অমর হয়ে থাকেন, অন্যের চোখে। মৃত্যুর পরেও বেঁচে থাকে তার দৃষ্টি।
তাই যোধপুর পার্ক শারদীয়া উৎসব কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুমন্ত রায় জানালেন, “আসুন আমরা এই দুর্গাপুজোয় মরণোত্তর চক্ষুদানে অঙ্গীকারবদ্ধ হই। আমাদের পুনর্জন্ম হোক দু চোখের আলোয়”।